যত্রতত্র সেতু না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
নতুন সড়ক নির্মাণের চেয়ে সড়ক মেরামত, মান-উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়ার নির্দেশ
‘যত্রতত্র ব্রিজ কইরেন না, সাবধানে ব্রিজ কইরেন’, প্রধানমন্ত্রী
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন সহজ করার মাধ্যমে সুযোগ পাবে নতুন ঠিকাদার
কাজ জানে না এমন কাউকে কাজ দেয়া যাবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক
যত্রতত্র সেতু না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক-এর চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা-এর সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক-এর সভায় এ নির্দশনা দেয়া হয়। ‘যত্রতত্র ব্রিজ কইরেন না, সাবধানে ব্রিজ কইরেন’, প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করেছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহি কমিটি (একনেক) প্রায় ৪৪৪৭.৭৬ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত ৬ টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন প্রায় ৪৪৩৯.৮৬ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজ¯^ অর্থায়ন ৭.৯০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামে-গঞ্জে আমরা অসংখ্য সেতু বানাচ্ছি, কিন্তু অহেতুক যেন না বানাই। এতে পানি চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হয়। নদীগুলো এমনি ভরে যাচ্ছে, সেতু নির্মাণ করলে পানি প্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হয়, পলি পড়ে আরও ভরে যায়। আপনারা সাবধানে সেতু বানাবেন, অহেতুক বানাবেন না।’
অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ হলো: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প যথাক্রমে “যশোর (রাজারহাট)-মনিরামপুর-কেশবপুর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৭৫৫) উন্নয়ন” প্রকল্প; “ফেনী-সোনাগাজী-মুহুরী প্রকল্প সড়কের ৩০তম কিঃমিঃ এ ৩৯১.৩৪ মিটার দীর্ঘ মুহুরী সেতু এবং বক্তারমুন্সী-কাজিরহাট-দাগনভূঁঞা সড়কের ১৩তম কিঃমিঃ এ ৫০.১২ মিটার দীর্ঘ ফাজিলাঘাট সেতু নির্মাণ” প্রকল্প এবং “কক্সবাজার জেলার একতাবাজার হতে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি পর্যন্ত সড়ক (জেড-১১২৫) উন্নয়ন” প্রকল্প; বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের “আগারগাঁওস্থ শেরে বাংলা নগরে পর্যটন ভবন নির্মাণ (১ম সংশোধিত)” প্রকল্প; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় “সিলেট জেলার সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় দশগ্রাম, মাহতাবপুর ও রাজাপুর পরগণা বাজার এলাকা সুরমা নদীর উভয় তীরের ভাঙ্গন হতে রক্ষা প্রকল্প এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের “রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা (PPS) নির্মাণ” প্রকল্প।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল; পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের; কৃষিমন্ত্রী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক; তথ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহ্মুদ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম; শিল্প মন্ত্রী নুরূল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন; স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক; বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন; ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীবর্গ সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজি’র মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আগ্রহ নিয়ে প্রায়ই প্রকল্প পাস করা হয়, দালান-কোঠা নির্মাণ করা হয়। তারপরে আর বাকি কাজ হয় না। হয় জনবল নাই, নয় যন্ত্রবল নাই। যে আগ্রহ নিয়ে আপনারা প্রকল্পের কাজ শেষ করেন, একই আগ্রহ নিয়ে আপনারা দয়া করে বাকি কাজগুলো করবেন। যাতে জনগণ যে সেবা পাওয়ার কথা, সেখান থেকে সেটা তারা পায়।’
নিজের বক্তব্য তুলে ধরে এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ। এটার সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। আমার নিজ এলাকায় এরকম কিছু স্থাপনা আছে। তড়িঘড়ি করে স্থাপনা কাজ শেষ করা হয়েছে, তারপরে আর কাজ হয় না। ছোট ঠিকাদারদের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনটা এমন যে, বড় বড় ঠিকাদার ছাড়া নতুন, ছোট ঠিকাদাররা সুযোগ বেশি পায় না। এটাকে একটু সহজ করেন, যাতে করে আরও কেউ ঢুকতে পারে এবং প্রতিযোগিতা হয়। সবাই যেন উন্নয়ন কাজে অংশ নিতে পারে। তবে মান ঠিক রেখে, কাজ জানে না এমন কাউকে কাজ দেয়া যাবে না।’ এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন সহজ করার কাজ চলছে। এটা হয়ে গেলে নতুন নতুন প্রতিযোগিতা হবে এবং নতুন ঠিকাদাররা ঢুকার সুযোগ পাবে।
নতুন সড়কের চেয়ে মেরামতে মনযোগ :
নতুন সড়ক নির্মাণের চেয়ে সড়ক মেরামত, মান-উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে সাবধানতার সঙ্গে সড়ক করতে হবে। কারণ, প্রচুর সড়ক হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, নতুন সড়ক নেয়ার আগে আমাদের চিন্তা করতে হবে। যেসব সড়ক আমাদের আছে বিশেষ করে আন্তঃজেলা সড়ক, এগুলোকে আমরা বিশ্বমানের নাহলেও আঞ্চলিক মানের করতে চাই। চারলেন করতে চাই, পুরু করতে চাই, যাতে সামান্য বৃষ্টিতে না ভেঙে যায়। এ জন্য এখন থেকে আমাদের মনোযোগ থাকবে সড়কের উন্নয়ন ও মেইনটেন্যান্সের দিকে। নতুন সড়ক নেব না, তা বলছি না। খুব সাবধানতার সঙ্গে নেয়া হবে। আর বর্তমানগুলোকে আমরা উন্নত করব। এটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত।