সাড়ে ৪ শ’ বছর পরও মাধুর্য ছড়াচ্ছে সুলায়মানি মসজিদ
সাড়ে ৪ শ’ বছর পরও মাধুর্য ছড়াচ্ছে সুলায়মানি মসজিদ
সুলায়মানি মসজিদ। অবস্থান তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে। উসমানীয় সা¤্রাজ্যের রাজকীয় মসজিদ এটি। সুলতান সুলেমান এ মসজিদের নির্মাতা। ১৫৫০ সালে এ মসজিদের নির্মাণ শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৫৫৭ সালে। সে হিসাবে এর বয়স ৪৬২ বছর। এ মসজিদ নির্মাণের পর থেকে গত সাড়ে চার শ’ বছরে সারা বিশ্বে অগণিত মসজিদ নির্মিত হয়েছে। কিন্তু আজো এ মসজিদের সৌন্দর্যের কাছে মলিন অনেক মসজিদের সৌন্দর্য।
শুরুতে এটি শুধু একটি মসজিদ মাত্র ছিল না, এটা ছিল একটি মসজিদ কমপ্লেক্স। মসজিদের সাথে কুরআন স্কুল তথা মাদরাসা, সাধারণ শিক্ষার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল, হাদিস শিক্ষাকেন্দ্র, লাইব্রেরি, বাজার, পার্ক, হাম্মামখানা, গণরান্নাঘর যেখান থেকে গরিব মানুষকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হতো। তবে আজ এর অনেক কিছুই নেই। গণরান্নাঘর এখন রেস্তোরাঁ আর মেডিক্যাল কলেজটি এখন একটি ছাপাখানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মসজিদের প্রবেশপথেই রয়েছে শাহান। শাহানের চারদিকে চারটি মিনার। শাহানের মাঝে ঝর্ণা। দীর্ঘকাল ধরে তুরস্কের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এ মসজিদ। মসজিদের অভ্যন্তরীণ কারুকাজ আজো মুগ্ধ করে দর্শকদের। মসজিদটির প্রধান গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে ৫৩৭ সালে খ্রিষ্টান বাইজানটাইন রাজা নির্মিত চার্চ হাজিয়া সোফিয়ার প্রধান গম্বুজ অনুকরণে। বাইরের দিক থেকে হাজিয়া সোফিয়া এবং সুলায়মানি মসজিদ দেখতে অনেকটা কাছাকাছি। উসমানীয়রা ইস্তাম্বুল জয়ের পর হাজিয়া সোফিয়াকে মসজিদে পরিণত করা হয়।
সুলায়মানি মসজিদ নির্মাণের পর এর অনুকরণে নির্মাণ করা হয় ব্লু মসজিদ যা এখন তুরস্কের প্রতীক। এরপর গত চার শ’ বছরের অধিক সময় ধরে বিশ্বের অনেক দেশের অনেক মসজিদ ও স্থাপনায় অনুকরণ করা হয়েছে ব্লু মসজিদের স্থাপত্যশৈলী।
ভূমিকম্পসহ দুইবার আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুলায়মানি মসজিদ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এ মসজিদের শাহান গোলাবারুদসহ অস্ত্রশস্ত্র রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। তখনো গোলাবারুদ থেকে আগুন লেগে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শুধু বিশালত্ব নয়, এর অভ্যন্তরীণ নকশা-মাধুর্য মুগ্ধতার অন্যতম কারণ। মসজিদের গম্বুজ এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে পুরো মসজিদ দিনের বেলায় সূর্যের আলোয় আলোকিত হতে পারে। জটিল কারুকাজ নয় বরং একে সাধারণত্ব দান করেছে। বিশেষ সৌন্দর্য আর মাধুর্য। মসজিদের চারদিকে এখনো রয়েছে খোলা বাগান। অদূরে বসফরাস প্রণালী আর সাগরের নীল জলরাশি এ মসজিদের সৌন্দের্যে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।
সুলায়মানি মসজিদ, ব্লু মসজিদ, সুলতান সুলেমানদের রাজপ্রাসাদ, প্রাচীন হাজিফা সোফিয়া সবই হাঁটাপথের দূরত্বে অবস্থিত এবং এ স্থানটি ইস্তাম্বুলের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।