অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন ষ্পট সুনামগঞ্জের লাল শপলার বিকি বিল


সুনামগঞ্জ:

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাল শাপলার হাওর বিকি বিল সম্ভাবনাময় পর্যটন ষ্পটে পরিণত হয়েছে।জেলার উত্তরে বিশাল জৈন্তা-খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে সুবিন্যস্থ হাওর, নদী, খাল জনপদ। প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল গ্রামের পাশে সম্ভাবনাময় লাল শাপলার বিকি বিল এখন নতুন পর্যটন ষ্পটে রূপ নিয়েছে। দেশের বৃহত্তম টাঙ্গুয়া হাওর, যাদুকাটা নদী, টেকের ঘাটের বারিক্কা টিলা, নীলাদ্রী শহীদ সিরাজ লেক ও জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানের সৌন্দর্যের কথা এতদিন শুধু মানুষের মুখে মুখেই ছিল। এখন এই সব স্থানে সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে উঁকি দিয়েছে লাল শাপলার বিল। প‚র্ব আকাশে সূর্যের রক্তিম আলোকছাটাকেও হার মানায় বিকি বিলের রক্তিম লাল শাপলা। পানির ওপর ফুলে ফুলে সাজানো লালগালিচা। আর দ‚রে গাঢ় সবুজ পাহাড়। লাল-সবুজে ভরা এমন প্রকৃতির রূপ যে কাউকে পাগল করে তোলে। এ যেন সবুজ পাহাড়ের সাথে লার শাপলার মিতালী। বিকি বিল যে কোন পর্যটককে মায়ার ইন্দ্রজালে জড়িয়ে রাখে। শীতের আগমন না ঘটলেও ষড়ঋতুর বাংলাদেশ সেজেছে লাল শাপলায়। এর সাথে রয়েছে দেশীয় নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির। মনে হয় যেন প্রকৃতি তার রূপের সাথে নিজে বাদ্যযন্ত্রে সুরের ঝরনাধারা ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেই এই হাওরে ফুটছে আর্কষণীয় লাল শাপলা। যা হাওরের আশপাশের পরিবেশ আর গ্রামগুলোকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। বর্ষাকালে হাওরটি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। আর বাকি ছয় মাস এখানে চাষ হয় এক ফসলী বোরো জমি। মাত্র কয়েক মাসের জন্য এখানে শাপলা ফুটে। সূযের্র উপস্থিতির সাথে সাথে শাপলা তার আপন সৌন্দর্যকে গুটিয়ে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে গুটিয়ে পড়ে। সূর্যোদয় থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য দৃশ্যমান থাকে।

জানা যায়, বিকিবিল হাওরের এক ‘শত কিয়ারের অধিক (৩০শতাংশে এক কিয়ায়) জমি নিয়ে এই শাপলার গালিচা। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শাপলার উপস্থিতি দেখা যায় এ হাওরে। এখানে জন্মে লাল শাপলার পাশাপাশি সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলাও। তবে এর মধ্যে নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার প্রতি আকর্ষণ সবার চেয়ে বেশী। সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা ম‚লত লাল শাপলার তুলনায় অপ্রতুল। অনেকে স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে থাকেন। কাশতাল, বরোখাড়া ও আমবাড়ি গ্রাম বিকি বিলটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। কোন রকম চাষাবাদ ছাড়াই ১৫-১৬ বছর যাবত প্রাকৃতিকভাবে এই বিলে লাল শাপলা ফুলের বিপুল সমারোহ ঘটে। বছরের ছয় মাস এই বিলে পানি অর ছয় মাসই লাল শাপলার এই অপরূপ দৃশ্য দর্শনার্থীগণ উপভোগ করতে পারেন। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো: আনিসুল হক বলেন, প্রাকৃতিক ভাবেই বিকি বিলে জন্মেছে লাল শাপলা। গোটা এলাকাজুড়ে এখন লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। বর্ষার শুরুতে শাপলা জন্ম হলেও হেমন্তের শিশির ভেজা রোদ মাখা সকালের জলাশয়ে চোখ পড়লে রঙ-বেরঙের শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে হয় কোনো এক সাজানো ফুল বাগানের মধ্যে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি। এ দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না।
গত ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ এই বিলটিকে পর্যটন ষ্পট হিসেবে ঘোষনা করেছেন।জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, নয়নাভিরাম নিলাদ্রী ডিসি পার্ক, শহীদ সিরাজ লেক, বারেকের টিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, প্রতœতাত্তিক নিদর্শন হলহলিয়া জমিদার বাড়ির পাশাপাশি লাল শাপলার বিকি বিলটি পর্যটন সম্ভবনার নতুন মাত্রা যোগ করবে। ভবিষ্যতে এটি পর্যটনে আকর্ষণে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। জেলা প্রশাসন বিকিবিলের উন্নয়নসহ এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

কিভাবে যাওয়া যায়: দেশের যো কোন স্থান থেকে সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জের আব্দুজ জহুর ব্রীজ থেকে তাহিরপুর উপজেলা সদরে ২’শত থেকে আড়াই শত টাকায় মোটর সাইকেল যেতে হবে তাহির পুর বাজারে। সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ৫ থেকে ৬ শত টাকায় টাঙ্গুয়া হাওর, লাল শাপলার বিকি বিল দেখার পর, মোটর সাইকেলে যাদুকাটা নদী, শিমুলবাগান, নিলাদ্রী লেক, বারিক্কা টিলাসহ দর্শনীয় সকল ষ্পটই দেখা যাবে। হাওর দেখে আবার তাহির পুর উপজেলা সদরে রেষ্ট হাউজ বা প্রাইভেট হোটেলে থাকা যাবে।