টোলবিহীন প্রকল্পে সরাসরি সড়ক পথ ঢাকা-কক্সবাজার


সেবা খাতের আওতায় এবারে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হতে যাচ্ছে কক্সবাজার। এই সড়কে থাকবে না টোলও। এ জন্য কক্সবাজার জেলার একতাবাজার থেকে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত জেলা মহাসড়কটি যথাযথমানে উন্নীত করা হলে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলা, একতাবাজার, পহরচাঁদা মগনামাঘাটসহ সব অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপদ ও উন্নত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে ৩৬১ কোটি ২১ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১০ জুন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলার একতাবাজার-পহরচাঁদা-মগনামাঘাট-বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটি পর্যন্ত জেলা মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার। এই সড়কের পহরচাঁদা হতে পেকুয়া পর্যন্ত অংশ নিচু, যা প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই পানিতে নিমজ্জিত থাকে। প্রথম কিলোমিটার থেকে ষষ্ঠ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক অংশের প্রশস্তকরণ, ষষ্ঠ কিলোমিটার থেকে ১২তম কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক অংশের পেভমেন্ট উঁচুকরণ, প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ এবং ২০তম কিলোমিটার থেকে ২৩তম কিলোমিটার পর্যন্ত নতুন সড়ক নির্মাণ করা হবে। ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ৫ মিটার প্রস্থ থেকে ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থে উন্নয়ন করা হবে। তাছাড়া সড়কের দুই পাশে ১ দশমিক ৫ মিটার করে হার্ডশোল্ডার থাকবে।

নতুন নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত সড়কাংশ বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটিতে যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম এবং যা বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত বেড়িবাঁধ। সড়কটি একতাবাজারের দ্বীপ উপজেলা কতুবদিয়ার জনসাধারণের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। পেকুয়া ও কতুবদিয়ার উৎপাদিত লবন এবং আহরিত চিংড়ি ও সামুদ্রিক সম্পদ সড়ক পথে দেশের অন্যান্য স্থানে পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম। মগনামাঘাট থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটিতে যাতায়াত সহজতর হবে। এ মহাসড়কটি এই নৌ এবং সাবমেরিন ঘাঁটির জন্য সম্পূর্ণ নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে।
এই বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটির যোগাযোগের প্রধান সড়ক মগনামাঘাট বাজার থেকে সাবমেরিন ঘাঁটি পর্যন্ত সম্পূর্ণ নতুন সড়ক নির্মাণের জন্য নৌ সদর দফতর থেকে সওজ’কে পত্র মারফত অনুরোধ জানানো হয়। এ জন্য ২৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ৩৬২ কোটি ১১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ওপর চলতি বছরের ১০ জুন পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তে ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৬১ কোটি ২১ লাখ টাকা।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছেÍ ২ দশমিক ৮৩০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৭৮ ঘনমিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নতুন পেভমন্ট নির্মাণ, ১১ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার শক্তিশালীকরণ এবং প্রশস্তকরণ, ৫ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার শক্তিশালীকরণ, প্রশস্তকরণ এবং উঁচুকরণ, চারটি ইন্টারসেকশন, ২৭ মিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট, দুইটি ড্রেনেজ ¯øুইস গেট, ২ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন কাম ফুটপাত নির্মাণ, ৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার কংক্রিট ¯øপ প্রটেকশন, ৩৫০০ মিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল, এক কিলোমিটার রিজিড পেভমেন্ট এবং ১ হাজার ৪৮৭ দশমিক ৮৮ বর্গমিটার কর্মচারী আবাসন করা হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠমো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ প্রকল্প এলাকার জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।