দিতে পারেন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট
সেলিম আহমেদ, ঢাকা : মানুষের খাদ্য তালিকায় আর যা কিছু থাকুক বা না থাকুক, বিশুদ্ধ খাবার পানি অবশ্যই থাকতেই হবে। অন্য সব কিছু না খেয়ে বাঁচা যায়, কিন্তু পানি না খেয়ে বাঁচা যায় না। শহরাঞ্চলে বিশুদ্ধ খাবার পানি এখন দুর্লভ জিনিসে পরিণত হয়েছে। কারণ ওয়াসার মাধ্যমে যে পানি সরবারহ করা হয়, সেটা খাবার উপযোগী নয়। বাধ্য হয়ে এখানকার মানুষকে খুঁজে হয় পানি বিশুদ্ধ করার বিকল্প উপায় অথবা বিশুদ্ধ পানির সন্ধান। এর মধ্যে বাসা-বাড়ির জন্য পানি ফুটানো, বিশুদ্ধকরণ মেশিন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর অফিস আদালতে বোতলজাত পানি অথবা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করা জারের পানি পান করতে হয়। দিনে দিনে মানুষ যেহেতু শহরমুখী হচ্ছে, তাই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের চাহিদাও সমান হারে বেড়েই চলেছে। এই চাহিদাকে মাথায় রেখে আপনি গড়ে তুলতে পারেন আপনার ব্যবসা। দিতে পারেন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট।
ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট
কিছু জায়গা আর হাতে ভালো পুঁজি থাকলে স্থাপন করতে পারেন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। একটি প্লান্ট তৈরি করতে তিন-চার কাঠা জায়গা হলেই হবে। আর বিএসটিআইয়ের ম্যানুয়াল অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ প্লান্ট তৈরি করতে পুঁজি লাগবে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। তবে ব্যবসা শুরুর জন্য আপনার থাকতে হবে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। এ ব্যবসা শুরু করার আগে আপনার লাগবে ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, ইনকরপোরেশন সার্টিফিকেট, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন, বিএসটিআই সার্টিফিকেট, আইসিডিডিআরবি সার্টিফিকেট ইত্যাদি।
যেভাবে শুরু করবেন
একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি করতে প্রথমে পানি রাখার জন্য একটি রিজার্ভ ট্যাংক তৈরি করতে হবে। যদি ওয়াসার পানির ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সাবমার্সেবল মেশিনের সাহায্যে মাটির গভীর থেকে পানি তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর তৈরি করতে হবে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। এই প্লান্টের মাধ্যমে ফিল্টার পদ্ধতিতে পরিশোধন করে খাওয়ার উপযোগী করে তোলা হয় সাধারণ পানি। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের সঙ্গে একটি ল্যাবও তৈরি করতে হবে, যেখানে পানির বিশুদ্ধতার মাত্রা ঠিক আছে কি না, তা প্রতিদিন পরীক্ষা করা হয়। এ জন্য একজন ফুলটাইম কেমিস্ট নিয়োগ দিতে হবে। আর বিএসটিআইয়ের কোড অনুযায়ী পুরো প্লান্ট টাইলস করতে হবে এবং সর্বদা পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
পানি বিশুদ্ধকরণের প্রক্রিয়া
ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পানি বিশুদ্ধ করার জন্য প্রথমে পানি স্টোরেজ ট্যাংক থেকে প্লান্টের ম্যাঙ্গানিজ সিলিন্ডারে প্রবাহিত করা হয়। এই সিলিন্ডারে ফিল্টার করে পানির আয়রন দূর করা হয়। এরপর কার্বন ফিল্টারের মাধ্যমে ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর করে রেজিন সিলিন্ডারে ঢোকানো হয় পানি। রেজিন সিলিন্ডারে পানির মাত্রা নির্ধারণ করে জারে সংরক্ষণ করা হয়।
বাজারজাতকরণ
আপনি যদি শুধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করতে চান, তাহলে আপনার আর বেশি কিছু করতে হবে না। শুধুমাত্র কিছু পানি সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করলেই চলবে। তাদের চাহিদা মত নিয়মিত পানি দিলেই আপনার কাজ শেষ। কিন্তু যদি আপনি পানি বিশুদ্ধকরণের সাথে সাথে পানি সরবারহ করতে চান তাহলে পরিবেশকের ট্রেড লাইসেন্স, নাম-ঠিকানা সংবলিত প্যাড এবং পানির জার সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা তথা সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন যে এলাকায় পানি সরবারহ করবেন সেখানে আপনার পরিচিতি। এরপর এলাকার অফিস-আদালত, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকান, রেস্টুরেন্ট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, চা দোকানে গিয়ে পানির চাহিদা এবং অর্ডার নিতে হবে এবং পানি সরবারহ করতে হবে।
আয়-রোজগার
ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তথা পানি বিশুদ্ধকরণ ও পানি সরবারহ দু’টো এক সাথে করলে লাভ তুলনামূলক একটু বেশি হবে। কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ দেয়ার পরেও মাসে ৪০/৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে পানির সঠিক মান নিশ্চিত, নির্দিষ্ট সময়ে পানি সরবারহসহ গ্রাহকদের সকল চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।
![](https://www.insurancetimesbd.com/wp-content/uploads/2019/05/1491061458_6-300x247.jpg)