বিআরটিএ-তে লম্বা লাইন


গত ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে নতুন সড়ক পরিবহন আইন। এর জেরে যানবাহনের মালিক-চালকদের লম্বা লাইন পড়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে। আগের চেয়ে কড়া শাস্তি ও বেশি জরিমানা থেকে রেহাই পেতে গাড়ির ডিজিটাল নম্বর প্লেট, ফিটনেস সনদ ও লাইসেন্স সংগ্রহ করতে ভিড় করছেন তারা। বাড়তি এই চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা।

বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক পরিবহন নতুন আইন হওয়ার আগে এত লোকের সমাগম হতো না। কিন্তু নতুন আইনে শাস্তি বেশি হওয়ায় পরিবহন মালিক ও চালকের মধ্যে একধরনের ভয় কাজ করছে। এ কারণে সব ধরনের গাড়ির ডিজিটাল নম্বর প্লেট, ফিটনেস সনদ, লাইসেন্স সংগ্রহ ও আবেদন করতে বিআরটিএ-তে মানুষের ভিড় অনেকে বেড়েছে।

বিআরটিএর উপ-পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুজ্জামান ভূঁঞা বলেন, ‘আগের তুলনায় গত দুই দিন বিআরটিএ-তে চাপ অনেক বেড়েছে। নতুন আইনের শাস্তি ও জরিমানা থেকে রেহাই পেতে মালিক-চালক সবাই সব ধরনের কাগজ ঠিক করতে আসছে। চালকদের মধ্যে একটা পরিবর্তন আসছে। আমরাও চাই যানবাহনের কাগজ আপডেট করেই সবাই সড়কে নামুক।’

ফিটনেস সেন্টার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই সেন্টারে দুটি ডিজিটাল মেশিন রয়েছে। তবে বিআরটিএর ভেতরে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে আরও ১২টি ফিটনেস টেস্টের মেশিন বসানোর কাজ চলছে। সেটা হলে একসঙ্গে অনেক গাড়ির ফিটনেস টেস্ট করা সম্ভব হবে।’ সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের কথা জানায়। তবে আগামী এক সপ্তাহ তারা মামলা ও জরিমানার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখাবেন বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম।

সোমবার বিআরটিএতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সব ধরনের যানবাহনের মালিক ও চালকদের ব্যাপক ভিড়। ভেতরে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলে, বাস-ট্রাকের সারি সারি লাইন। বিআরটিএর প্রবেশমুখে মোটরসাইকেলের ডিজিটাল নম্বর প্লেটের বিতরণ চলছে। কয়েকশ মোটরসাইকেল চালক ডিজিটাল নম্বর প্লেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। গাড়ির ফিটনেস সেন্টারে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে প্রাইভেটকার, বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। ফিটনেস টেস্টে কাজ করছেন বিআরটিএর সহকারী ফিটনেস পরিদর্শকরা। অন্যদিকে, লাইসেন্স শাখায় গ্রাহকদের ছবি তোলা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার লাইনটিও ছিল অনেক বড়। এছাড়াও বিআরটিএর প্রায় সবকটি কক্ষের সামনে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাহবুব আলম সুমন মোটরসাইকেল চালান। তিনিও এসেছেন বিআরটিএ-তে। তিনি বলেন, ‘নতুন আইনে যে জরিমানা ধরা হয়েছে, সেটা অনেক বেশি। এই আইনে জরিমানা বা মামলা হলে বিপদে পড়ে যাবো। তাই আগে থেকেই কাগজপত্র ঠিক করে নিচ্ছি, যাতে হয়রানি হতে না হয়।’ট্রাকচালক আল আমিন বলেন, ‘ফিটনেস সনদ না থাকলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, আবার জেলও দিবো। এরপরও কত হয়রানি আছে! তাই নিজের জান আগে বাঁচাইতে হবে। মামলা খাইলে এত টাকা কই থেকে দিবো?’

বিআরটিএর ফিটনেস সেন্টারের সহকারী মোটরযান পরিদর্শক রাশেদ মিলন বলেন, ‘রবিবার ও সোমবার, দুই দিনই আমরা খুব চাপের মধ্যে আছি। প্রচুর যানবাহন ফিটনেস টেস্ট করতে আসছে। আমাদের ফিটনেস টেস্টের জন্য ডিজিটাল মেশিন রয়েছে মাত্র দুটি।’ ফিটনেস টেস্টের আরও মেশিন দরকার বলেও মত দেন তিনি। বিআরটিএ’র লাইসেন্স শাখায় লার্নার (আবেদন) করতে এসেছেন মোটরসাইকেল চালক আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ‘গাড়ির সব কাগজপত্র ঠিক আছে, শুধু লাইসেন্স নেই। তাই লাইসেন্সের আবেদন করতে এসেছি। মামলা খাওয়া যাবে না ভাই!’

বিআরটিএর আনসার ক্যাম্পের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) ওয়াহেদ মিয়া বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যাতে বিআরটিএ-তে এসে সঠিক সেবা পায় সেজন্য আমরা প্রতিনিয়ত দায়িত্ব পালন করছি। এরপরও অনেক সময় ভেতরে দালালের দৌরাত্ম্য হয়।’ তবে গত দুই দিনে ১৪-১৫ জনকে ধরে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।