সন্তানের কাছে পিতার খোলা চিঠি ।
প্রিয় সন্তান,
আমি যখন বার্ধক্যে যাব,
আশা করব,
তুমি আমাকে বুঝবে এবং
আমার সঙ্গে আচরণে ধৈর্যশীল হবে।
ধরো, আমি যদি হঠাৎ খাওয়ার প্লেট ভেঙে ফেলি অথবা টেবিলে স্যুপ ফেলে নষ্ট করি,
বুঝবে আমি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি।
আশা করি, তখন তুমি চিৎকার করবে না।
আর যদি উঁচু স্বরে কথা বলো, বুঝবে তখন আমি নিজের কাছে খুব ছোট হয়ে যাই, অসহায় আর অপরাধী মনে করি নিজেকে।
যখন আমার শ্রবণশক্তি শেষ হয়ে আসছে এবং শুনতে পাচ্ছি না আমাকে তুমি ঠিক কী বলছ, তখন আমাকে ‘বধির’ বলা উচিত নয়।
দয়া করে তুমি আবার বলো অথবা লিখে দেখাও।
আমি দুঃখিত বাবা।
বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি, আমার পা দুর্বল হয়ে আসছে।
আমি মনে মনে চাই, তোমার ধৈর্য থাকবে আমাকে দাঁড়াতে সাহায্য করতে।
যেভাবে আমি তোমার পাশে ছিলাম, যখন তুমি ছোটবেলায় হাঁটতে শিখছিলে।
আমার কিছু কথা শোনো, যখন আমি অসহায়ের মতো তোমাকে কিছু বলব…তোমার কাছে ভাঙা রেকর্ডের মতো লাগলেও আমার কথা শুনে বিরক্ত হোয়ো না।
তোমার মনে আছে? তুমি ছোট থাকতে আমার কাছে একটা বেলুন চেয়েছিলে। সেটা না পাওয়া পর্যন্ত বারবার আমাকে সেটাই বলতে। সারাক্ষণ জিজ্ঞেস করতে, ‘কখন দেবে, কখন দেবে…।’
দয়া করে আমাকে গোসল করার জন্য জোর ক’রো না। আমার শরীর দুর্বল। ঠান্ডায় বয়স্ক মানুষ খুব তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে যায়। তুমি যখন ছোট ছিলে…আমাকে তোমার পেছনে দৌড়াতে হতো।
কারণ, তুমি গোসল করতে চাইতে না।
তোমার অলস সময়ে, আশা করব তুমি আমার সঙ্গে একটু সময়ের জন্য হলেও কথা বলবে।
আমি সব সময় একাকিত্বে ভুগি এবং কথা বলার মানুষ পাই না।
জানি তুমি ব্যস্ত থাকো কাজে অথবা আমার কথায় ও গল্পে আনন্দ পাও না তেমন, তবু আমার জন্য কিছু সময় রেখো। তোমার কি মনে পড়ে? যখন ছোট ছিলে, তখন তোমার টেডি বিয়ারের গল্প আমি শুনতাম।
যখন আমার মৃত্যু আসবে, তুমি কি আমার হাত ধরে থাকবে? যা আমাকে সাহস জোগাবে।
তুমি চিন্তা কোরো না, মৃত্যুর পর যখন আমার সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে দেখা হবে, আমি তাঁর কানে কানে অবশ্যই বলব, তোমাকে অনুগ্রহ করতে, তোমার প্রতি দয়াশিল হতে……
কারণ, তুমি তোমার মা-বাবাকে ভালোবেসেছিলে।
ভালো থাকবে সব সময়।
❤বাবা❤
@
সংগৃহীত। জনাব আতিক উল্লাহ্ মজুমদার